২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সংরক্ষিত নারী আসন : আলোচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ নারী

-

নির্বাচন এবং সরকার গঠনের পর এবার আলোচনায় সামনে এসেছে একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী (মহিলা) আসন। ইতোমধ্যেই সংরক্ষিত নারী এমপিদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য পদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ নারীকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এর মধ্যে ২/৩জন দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রে জোর লবিং করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জেলার বিভিন্ন আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাদের অনেকেই।

সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছয় নারী হলেন, বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রসিকিউটর অ্যাড. ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত, নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক নুরুন্নাহার বেগম, আশুগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঢাকা জজ কোর্টের নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের এপিপি অ্যাড. মনিরা বেগম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, জেলা পরিষদের সদস্য সনি আক্তার সূচি।

এদের মধ্যে বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাড. ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাজ করার সুবাধে এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিয়ে সাধারণ মহলে বেশ পরিচিত। ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রায় সব আন্দোলন সংগ্রামেই তার ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) ও ২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) দুটি আসনের যে কোনো একটির মনোনয়ন প্রত্যাশায় দুটি আসনের জন্যই দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। বর্তমানে আবারো তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার আনুগত করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নের ব্যাপারে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই চূড়ান্ত।

সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ) সরাইল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা মরহুম একে এম ইকবাল আজাদের সহধর্মীনি। বিগত ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর দলীয় কোন্দলে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন ইকবাল আজাদ। এতে এক ধরনের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পর শুভাকাক্সক্ষীদের পরামর্শে স্বামীর পদাঙ্ক অনুস্মরণে রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। ফলে তার হাত ধরে আবারো উজ্জীবিত হয়ে উঠে দলীয় নেতা কর্মীরা। খুব অল্প সময়েই দলকে পুনরায় সুসংগঠিত করতে সক্ষম হন শিউলী আজাদ।

তার এই সাংগঠনিক কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে মহাজোটের স্বার্থে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন এবং মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন।

সম্প্রতি শেষ হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যাপক গণসংযোগ করেছিলেন এ সাহসী নেত্রী। কিন্তু এবারও জোট মহাজোটের হিসাব-নিকাশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না দেয়ায় মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কোনো কোনো নেতা এবার দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও যথারীতি শেখ হাসিনার নির্দেশের আনুগত করেন ত্যাগী নেত্রী শিউলী আজাদ। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তিনি এ আসনের মহাজোট প্রার্থীসহ জেলার অন্যান্য আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ) বলেন, ‘আমার স্বামী শহীদ ইকবাল আজাদ দীর্ঘ ২২ বৎসর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। বিশেষ করে সরাইল উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক তৎপরতায় তার ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। তিনি বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আমিও আমার স্বামীর পথ ধরেই হাটছি। তাই দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়নের ও অংশীদার হতে চাই। আর এজন্যই সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাঠের নেত্রী অ্যাড. তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশাত সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ৫২২ ভোট পেয়ে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নেতৃত্বে মডেল উপজেলা পরিষদ গঠন ও নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াও একজন আইনজীবী, সাংবাদিক, সমাজ ও সংস্কৃতি কর্মী হিসেবেও পরিচিত নিশাত। জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে থেকেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি। জেলা জজ আদালতের এপিপি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তারও আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুইড-বাংলাদেশ পরিচালিত আসমাতুন্নেছা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে তিনি নারী সাংবাদিকতায় ‘সালমা সোবহান ফেলোশীপ’ (ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া) অর্জন করেন নিশাত।

নবীনগর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুরুন্নাহার বেগম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সে সুবাধে দীর্ঘদিন যাবত উপজেলার গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নুরুন্নাহার বেগম। নবীনগরের সবকটি ইউনিয়নিয়নের প্রায় সব গ্রামে ধারাবাহিকভাবে উঠান বৈঠক করেছেন তিনি। ফলে নির্বাচনী এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে তিনি জানান। বিশেষ করে একজন সফল নারী নেত্রী হিসেবে গ্রাম-গঞ্জের মহিলাদের সাথে তার রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন নুরুন্নাহার বেগম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সদস্য হবার সুবাধে এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডেও তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ব্যক্তিজীবনে নুরুন্নাহার সলিমগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘দলকে ভালোবেসে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে ছাত্রজীবন থেকেই আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখে আসছি। আশা করি দল সেটি মূল্যায়ন করবে।’

এছাড়া নারী আসনের এমপি হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাড. মনিরা বেগম ও সনি আক্তার সূচিও দলীয় কর্মকান্ডে নিজ নিজ অবদানের কথা উল্লেখ করে মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement