প্রবাসীর স্ত্রী মিশুর পরকীয়া রাজমিস্ত্রীর সাথে, লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত
- মো. সাইদুল ইসলাম, বানারীপাড়া (বরিশাল)
- ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:২৮, আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৪
বানারীপাড়ায় আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। পরকীয়া প্রেমের বলি এ ট্রিপল মার্ডার বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ফলে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে হত্যা মামলায় রোববার গ্রেফতার করা হয়েছে।
অপরদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া প্রধান দুই ঘাতক জাকির ও জুয়েল আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রোববার রাতে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. এনায়েত উল্লাহ তাদের জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত দুই ঘাতকের মধ্যে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনের সঙ্গে পূর্বে থেকেই কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আ. রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রবাসীর বাড়িতে বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে এ পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পরকীয়ার সেই সম্পর্ক ধরেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার দিবাগত রাতে সহযোগী জুয়েলকে নিয়ে প্রবাসীর ঘরে প্রবেশ করেছিলো জাকির। তারা দু’জনে মিলেই প্রবাসীর মা ও ভগ্নিপতিসহ তিন জনকে হত্যা করে। প্রথমে তারা প্রবাসীর খালাতো ভাই ভ্যানচালক ইউসুফকে (২২) শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগমকে (৭৫) একইভাবে শ্বাস রোধ করে হত্যা করার সময় পাশের কক্ষে ঘুমানো শফিকুল আলম ঘুমের মধ্যে কাশি দিলে ঘাতকরা মনে করে সে বিষয়টি টের পেয়েছে।
ফলে ধরা পড়ার ভয়ে তাকেও শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। শনিবার সকালে ঘটনাস্থল হতে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন ও রাতে র্যাবের সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বরিশাল সদর উপজেলার কাগাশুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় জুয়েলকে।
ওই বাসা থেকে ঘাতকদের স্বর্নালঙ্কার ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি চুরি-ডাকাতির কারণে হয়েছে এটা প্রমাণের জন্য।
আরও জানা যায়, ‘আসামিদ্বয় আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পরে ঘটনার সঙ্গে প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর জড়িত থাকা এবং পরকীয়ার বিষয়টি প্রসাশনের নজরে আসে। এ কারণেই রোববার রাতেই মিশুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিন আসামীকে রিমান্ডে আনা হতে পারে বলেও জানা গেছে।
এদিকে পরকিয়া প্রেমিকের সঙ্গে নির্বিঘ্নে অবাধে অভিসারে মিলিত হতে ও সংসারে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিতে প্রবাসীর স্ত্রী পরকিয়া প্রেমিকের সঙ্গে মিলিত হয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শাশুড়িসহ এ ট্রিপল হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।
তবে পথের কাটা হিসেবে তাদের মূল টার্গেট ছিলো বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম ও তার বোনের ছেলে ইউসুফ।
উল্লেখ্য শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা ও কুয়েতের একটি মসজিদের ইমাম হাফেজ আ. রবের মা মরিয়ম বেগম, ভগ্নিপতি ও সাবেক স্কুল শিক্ষক শফিকুল আলম এবং খালাতো ভাই ইউসুফকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
এদিকে রোববার সকালে এ ঘটনায় প্রবাসী আ. রবের ছোট ভাই ঢাকায় এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদের মামলায় অপর ঘাতক জুয়েল হাওলাদার ও প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতকদের ফাঁসির দাবীতে সোমবার সকালে বানারীপাড়ার বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। একই পরিবারের ৩ জনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে (৩২) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার বিকেলে মিশরাত জাহান মিশুকে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বানারীপাড়া) আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শিশির কুমার পাল ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালতের বিচারক মনিরুজ্জামান শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে মিশুকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
মিশরাত জাহান মিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার মরিয়মের (৭৫) বড় ছেলে কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের স্ত্রী। বানারীপাড়া থানার জিআরও শাম্মী আক্তার সাথি জানান, ট্রিপল ওই হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শোনার পর রোববার রাতে মিশরাত জাহান মিশুকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে দুই আসামি নির্মাণ শ্রমিক জাকির হোসেন (৪০) ও জুয়েল হাওলাদারকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়।
প্রসঙ্গত, বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আ. রবের মা মরিয়ম বেগম(৭৫), ভগ্নিপতি শফিকুল আলম(৬৫) ও খালাতো ভাই ইউসুফকে(২২) শুক্রবার রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত মরিয়ম বেগমের ছোট ছেলে ঢাকায় এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ প্রধান ঘাতক রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনকে সুনির্দিষ্ট ও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।