০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ছেলের প্রতারণায় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জায়গা হলো গোয়াল ঘরে

- ছবি : নয়া দিগন্ত

শুকুর দেওয়ান(৭০) ও সহুরা বেগম(৬৫) বৃদ্ধ এক দম্পতি। এক ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে এই দম্পত্তির। ছেলে-মেয়ে কারো ঘরে ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধ বাবা-মায়ের। তাই এই বৃদ্ধ বয়সে থাকতে হচ্ছে পাশের বাড়ির ঘোয়াল ঘরে। সেখানে আশপাশের লোকজন কিছু খাবার দিয়ে যায়, তা খেয়েই জীবন বাঁচাচ্ছেন তারা। ধর্মভীরু মুসলিম এই দম্পত্তির নামাজের জন্য নুন্যতম প্রবিত্র জায়গাটুকুও নেই।

ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যার মধ্যেও ঘোয়াল ঘরে থাকতে হচ্ছে। এভাবেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী গ্রামে। ঘটনার একমাস অতিবাহিত হলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

জানা গেছে, শুকুর দেওয়ান পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। নিজের বাড়ি ছিল, যায়গা সম্পত্তি ছিল, এমনকি গরু ছাগলের খামারও ছিল। এক সময়ে সুখে শান্তিতে কেটেছিল তাদের জীবন। মর্জিনা, রোকেয়া, খোদেজা ও সালমা নামের চার মেয়ে রয়েছে দম্পতির। মেয়েরা বড় হলে তাদের বিয়ে দেয়। সংসারে ছিল একমাত্র ছেলে হোসেন দেওয়ান(৩০), পুত্রবধু ও তারা দুজন। এই চারজনের সংসারও দীর্ঘদিন সুখে কাটছিল। পরে শুকুর দেওয়ান বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পরলে, চিকিৎসার কথা বলে ছেলে হোসেন বাবাকে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী উপজেলা গলাচিপায়। সেখানে গিয়ে বাবার সম্পাত্তি নিজের নামে দলিল করে নেন। এর পরে সেই সম্পত্তি চাচা তাজু দেওয়ানের কাছে বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে লাপাত্তা হয়ে যায় হোসেন। কিছু দিন পরে ক্রয়সূত্রে জমির মালিক হয়ে তাজু দেওয়ান বাড়ি থেকে বের করে দেন শুকুর দেওয়ান ও তার স্ত্রীকে। তখন হাঠাৎ করে অসহায় হয়ে পড়ে বৃদ্ধ এই দম্পত্তি। ভাইকে জমি দেয়ায় মেয়েরাও বাবাকে ত্যাগ করেন। কোন উপয়ন্ত না পেয়ে পাশের বাড়ির একটি গোয়াল ঘরে আশ্রয় নেন এই দম্পতি। এর পর থেকে সেখানেই মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। পাশের বড়ির লোকজন কিছু খাবার দিয়ে যায়, তা খেয়ে জীবন বাঁচছে। অসহায় এই দম্পতি দিন রাত কেঁদে কেঁদে পার করছেন।

জানতে চাইলে বৃদ্ধ এই দম্পত্তি কান্না জড়িত কণ্ঠে প্রতিবেদকে বলেন, ‘বাবা আমাগো জমিজমা পোলায়  (ছেলে) আমারে ভুল বুঝাইয়া আমার ভাই তাজুর কাছে বেইছা দিছে। এ্যাহন পোলায় দ্যাশ ছাইরা চইল্লা গ্যাছে। তাজু আমারে বাড়ির তোনে নামাইয়া দিছে। আমি কোন দিশাবিশা না পাইয়া গরুর ঘরে উঠছি। আশপাশের কিছু ভাল মানুষ আছে তারা আমাগোরে খাওন দিয়া যায় আমরা হেইয়া খাইয়া থাহি। আল্লায় যেন এই জীবন থাইকা আমাগোরে মুক্তি দেয়। শেষ জীবনে যাতে একটু নামাজ রোজা কইরা মরতে পারি হেইডাই চাই।’

ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম আব্দুল মান্নান জানান, আমি লোক পাঠিয়েছি দেখার জন্য। আমাকে জানালে আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করবো।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাশফাকুর রহমান জানান, যেখানে বর্তমান সময়ে দেশে দারিদ্র নেই বললেই চলে। সেখানে একজন মানুষ বাসস্থানহীন হয়ে গোয়াল ঘরে আশ্রয় নিবে এটা কখনো মেনে নেয়া যায়না। বিষয়টি আসলেই মর্মান্তিক। আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement