২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সর্বাধুনিক সব অস্ত্রের মহড়া দিল চীন

-

নতুন ধরনের সর্বাধুনিক হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনী করেছে চীনের সামারিক বাহিনী। বলা হচ্ছে এই অস্ত্র বিশ্বের যে কোন ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা তার মিত্র দেশগুলো যেসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন রেখেছে- তাতে এই নতুন অস্ত্রটিকে আটকানো সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার চীনের কমিউনিস্ট শাসনের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে এই অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। সামরিক যানের উপর স্থাপিত ডিএফ-১৭ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র ছিলো কুচকাওয়াজের মূল আকর্ষণ।

অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই অস্ত্রটির ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে কারণ এই ক্ষেপণাস্ত্রের গতি এত বেশি যে এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ছোড়া হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার খুব কম সময় পাওয়া যাবে। এছাড়া এটিতে ওয়ারডেহ যুক্ত করার জন্য স্বয়ংক্রিয় যান ব্যবহার করার কারণেও এটি চিহ্নিত করা কঠিন হবে।

প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হওয়ার কারণে ডিএফ-১৭ হাইপারসনিক যানটি তার ওয়ারহেড ছোড়ার জন্য অনেক নিচু দিয়ে উড়তে পারবে; কিন্তু এটিকে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করতে পারবে না।

বেইজিংয়ের তিয়েনআমেন স্কয়ারে ৮০ মিনিটের ওই কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

ডিএফ-১৭ ছাড়াও নতুন একটি ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে দেশটির সরকার। অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি সব প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে মাত্র ৩০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম বলে জানানো হয়েছে। ১৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ পাল্লার।

অত্যাধুনিক এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম ডংফেং-৪১। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজনে ১৫ হাজার সেনা, ১৬০টি যুদ্ধবিমান এবং ৫৮০টি সামরিক সরঞ্জামের সাথে এটিও প্রদর্শিত হয়।

এছাড়া জাহাজ ও বিমানবিধ্বংসী নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ছিল দূরপাল্লার একাধিক রকেট লঞ্চারের উপস্থিতি। দ্রুতগতিসম্পন্ন নজরদারি ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ডি-৮ এবং ‘শার্প সোর্ড’ খ্যাত দু’টি মনুষ্যবিহীন ড্রোনও দেখানো হয়। প্রদর্শনীতে ছিল রসদ সরবরাহ বিমান ওয়াই-২০, স্টিলথ জঙ্গিবিমান জে-২০সহ উড়ন্ত অবস্থায় জ্বালানি ভরা ও বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহনে সক্ষম বোমারু বিমান এইচ৬-এনের সর্বশেষ ভার্সন।

এদিন ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে গণচীন (পিপলস রিপাবলিক অব চায়না-পিআরসি) প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে চীন। কমিউনিস্ট বাহিনী রক্তাক্ত একটি গৃহযুদ্ধে জয় পাওয়ার পর ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও সে তুং বা চেয়ারম্যান মাও গণচীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে অসাধারণ গতিতে আধুনিক চীনের উন্নয়ন ঘটে; কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র হলেও চীন বিশ্বের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রণমূলক রাষ্ট্রও। গণচীনের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মঙ্গলবার রাজধানী বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থলে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, ‘এ পর্যন্ত কোনো শক্তিই চীনা জনতা ও জাতির অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি।’

বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থল তিয়ানআনমেন স্কয়ারে ১৫ হাজার সৈন্য কুচকাওয়াজে অংশ নেয় এবং চীনের সর্বাধুনিক সামরিক প্রযুক্তির প্রদর্শনী করা হয়। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে মাও গণচীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঠিক সে জায়গায় দাঁড়িয়ে মাওয়ের মতো স্যুট পরে শি জিনপিং বক্তব্য রাখেন। দেশটির উচ্চপদস্থ নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই মাও স্যুট পরে ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement