জাতিসঙ্ঘ অবরোধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৫ মে ২০১৯, ০৭:২৫
রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিল জানায়, মিয়ানমার সেনাদের জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানের মুখে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে রাখাইন রাজ্যের মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তারা তখন তাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা, আটক ও গণধর্ষণের মতো অপরাধ চালায়। তখন প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম। জাতিসঙ্ঘের হিসাব মতে, সব মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়েছে। আর মিয়ানমার সেনাদের এই রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে জাতিসঙ্ঘ।
মিয়ানমারের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারম্যান মঙ্গলবার এক বিবৃতেতে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। এখনো পুরোপুরি অচল অবস্থা বিরাজ করছে।’
অন্যদিকে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য ক্রিস্টোফার সিদোতি বলেন, ‘মিয়ানমারের বর্তমান ও অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর ইস্যুর সমাধানে আমাদের মিয়ানমারের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। তাদের ওপর চাপ বাড়াতে আমরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর লোকজনকে শনাক্ত করতে পারি এবং তাদের সাথে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করা উচিত।’
তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে কোন কোন রাষ্ট্রের কী ধরনের সম্পর্ক আছে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের বিবৃতিতে তা স্পষ্ট করা হয়নি।
জাতিসঙ্ঘের অভিযোগ, কেবল রোহিঙ্গা নয়, সে দেশের সেনাবাহিনী মিয়ানমারের আরো অনেক জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর ওপর মানবতা বিরোধী অপরাধ ও সহিংসতা চালাচ্ছে।
যদিও মিয়ানমার তাদের বিরুদ্ধে আনা মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ স্বীকার করে না। তারা দাবি করে থাকে, নিরাপত্তা বাহিনী কোনো বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করেনি, তারা কেবল সশস্ত্র রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাব দিয়ে থাকে।
এই রোহিঙ্গা সঙ্কটকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসঙ্ঘের সাথে মিয়ানমারের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। এর আগে গত দশকে দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে সমর্থন জানিয়ে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিলো জাতিসঙ্ঘ।
গত বছর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সাথে সম্পৃক্ত সেনাসদস্যদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। এ ছাড়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু আর্থিক সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। কোনো বড় পশ্চিমা শক্তি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সরাসরি সহায়তা দেয় না।
কিন্তু মিয়ানমার সামরিক বাহিনী বেশ কয়েকটি বেসামরিক অর্থনৈতিক খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো এসব কোম্পানির সাথে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়। জাতিসঙ্ঘ চাইছে এসব ক্ষেত্রে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করুক বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো।
মিয়ানমারের সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে দেশের সামরিক বাহিনীর অর্থপ্রবাহ বন্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হয়। দেশটি মিয়ানমারের আমদানি-রফতানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও রাশিয়া ও বেলারুশ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অস্ত্র সরবরাহকারী দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম সংস্থা।
এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল তুন তুন নিওয়াই বলেছেন, জাতিসঙ্ঘের এ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ হাজির করছে। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশ একটি স্বাধীন দেশ, সে কারণেই নিজেদের বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ মেনে নিই না আমরা।’
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে সরকারের মনোনীত একটি তদন্ত দলকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সহযোগিতা করেছে বলেও জানিয়েছেন তুন তুন। মানবাধিকার কর্মীরা অবশ্য ওই তদন্ত দলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সূত্র : আলজাজিরা ও এপি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা