১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দিন বদলানোর আশায় চিলির রাস্তায় ১০ লাখ লোক

চিলির রাস্তায় জনস্রোত - ছবি : সংগৃহীত

বাড়তে থাকা সামাজিক আর অর্থনৈতিক ফারাকের বিরুদ্ধে সপ্তাহখানেক আগেই গর্জে উঠেছিলেন চিলির মানুষ। পুলিশ আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তখন প্রাণ গিয়েছিল ১৭ জনের। আহত হন শতাধিক। আরো একবার আর্থিক সাম্য, বর্ধিত বেতন আর পেনশনের দাবিতে রাস্তায় নামল চিলি। শনিবার রাজধানী সান্তিয়াগোতেই শুধু ১০ লাখেরও বেশি মানুষ সমবেত হন। দেশের অন্য শহরেও একই ভাবে বিক্ষোভে গলা ফাটিয়েছেন আরো কয়েক লাখ মানুষ।

২০১৭ সালে মধ্য বামপন্থী জোট সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন সেবাস্তিয়ান পিনিয়েরা। দক্ষিণপন্থী এই ধনকুবের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গত দু’বছরে ক্ষোভ জমেছে অনেকটা। এতটাই যে, শহরের প্রতিটি রাস্তা ছিল সাধারণ মানুষের ভিড়ে রুদ্ধ। ট্যাক্সি থেকে বাস, ট্রাকের চালক, নিজেদের পেশা ছেড়ে তারাও পা মেলান বিক্ষোভে। প্রেসিডেন্ট-বিরোধী পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল সান্তিয়াগোর রাস্তা। মিছিলের দাবি একটাই, ‘প্রেসিডেন্ট নিজের গদি ছাড়ো’। রংবেরঙের মুখোশ পরা ভিড়টা হাতে পতাকা নিয়ে আর ড্রাম পিটিয়ে সেই কথাই শুধু বলে গেছে নিরন্তর।

খুব সম্প্রতি বাস-ট্রেনের ভাড়া অত্যধিক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় পিনিয়েরা সরকার। তার প্রতিবাদেই রাস্তায় নামেন দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের লাখো মানুষ। লুটতরাজ আর বিক্ষোভ সামলাতে সেনা নামাতে হয় সরকারকে। সরকারি সম্পত্তি নষ্টের পরিমাণ প্রায় ১৪০ কোটি ডলার। সাত হাজার বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হন। তবে ১৭ জনের মৃত্যুর পরে সান্তিয়াগোতে এখন নিয়ম করেই রাত এগারোটা থেকে শুরু হয় কার্ফু। শহরের গলিতে গলিতে ঘোরে প্রায় কুড়ি হাজার সেনা। শনিবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। দুপুর থেকে জমতে থাকা ভিড় তাই রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাল ঘরেও ফিরে গেছে। অশান্তির ভয়ে শহরের প্রায় প্রতিটি গলিতেই সেনাবাহিনী নামিয়েছিল সরকার। বিক্ষোভ চলাকালীন কালো গাড়িতে তারা অপেক্ষা করলেও গোলমাল বা অশান্তির কোনো খবর মেলেনি।

কাল সান্তিয়াগোর ধনী পাড়া অবশ্য শান্তই ছিল। কিন্তু শহরের বাকি এলাকায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের স্রোতটা ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের গভর্নর কার্লা রুবিলার বারায়োনা টুইট করে লেখেন, ‘‘আজ এক ঐতিহাসিক দিন। লক্ষ লক্ষ মানুষের এই শান্তিপূর্ণ মিছিলই বলে দেয় চিলিতে নতুন দিন আসছে। ষাট লক্ষের শহরে পথে নেমেছেন দশ লক্ষেরও বেশি।’’


গভর্নরের সুরই শোনা গেল ৮২ বছরের ক্লতিলদে সোতোর গলায়। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বললেন, ‘‘এ দেশে দিন বদল না দেখে মরতে চাই না। সবচেয়ে বড় কথা ভালো বেতন আর ভালো পেনশন চাই সবাই।’’ নিজের বাইশ বছরের মেয়েকে ইতিহাস দেখাতে এনেছিলেন বেয়াত্রিস দেমুর। ৪২ বছরের শিক্ষক বললেন, ‘‘চিলিকে সকলের বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। তিরিশ বছরে এ দৃশ্য দেখেনি আমাদের দেশ।’’ বেয়াত্রিসের মেয়ে আনালি বললেন, ‘‘আমি এই দিনটা দেখার জন্য বহু বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। এই মুহূর্টাত ভয়ের নয়। উত্তেজনার। এর মানে পরিবর্তন আসছে।’’

প্রেসিডেন্ট পিনিয়েরা অবশ্য অশনি সঙ্কেত টের পেয়েছেন ইতিমধ্যেই। বৃহস্পতিবারই তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘সাধারণ মানুষের বার্তা সরকারের কানে পরিষ্কারভাবে পৌঁছেছে।’’ বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য আইনসভার সদস্যদের তড়িঘড়ি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গেই বাড়ানো হচ্ছে ন্যূনতম বেতনও। ২০ শতাংশ পেনশন বাড়ানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

 


আরো সংবাদ



premium cement