সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণ আবেদন বাতিল হয়ে যাচ্ছে
- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫২
ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় অধিকাংশ সরকারি চাকরিজীবীর স্বল্পসুদে গৃহনির্মাণ ঋণ আবেদন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত ১৫০ জন সরকারি চাকরিজীবীকে ৫ শতাংশ সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার কাজ শুরুও করে দিয়েছেন। বাতিল হয়েছে এক হাজারেরও বেশি আবেদন। সবচেয়ে বেশি ঋণ আবেদন করেছেন যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থান করছে রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটি সর্বাধিক সংখ্যক চাকরিজীবীদের ঋণ প্রদান করেছে। গৃণনির্মাণ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী, একজন সরকারি চাকরিজীবী সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ ও সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারছেন।
জানা গেছে, ঋণ পাওয়ার জন্য প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী, প্রাইভেট প্লটের ঋণের জন্য আবেদনপত্রের সাথে বিভিন্ন দলিল জমা দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জমির মূল মালিকানা দলিল; এসএ/আরএস রেকর্ডীয় মালিক থেকে মালিকানা স্বত্বের প্রয়োজনীয় ধারাবাহিক দলিল; সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং প্রয়োজ্য ক্ষেত্রে সিটি জরিপ খতিয়ান জাবেদা নকল; জেলা/সাব রেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃক ইস্যু করা ১২ বছরের নির্দায় সনদ (এনইসি)। আর, ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে জমা দিতে হবে রেজিস্ট্রি করা বায়নাচুক্তি এবং ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল (বন্ধক দেয়ার আগে)।
সরকারি/লিজ প্লটের জন্য ঋণ আবেদনের সাথে যে প্রমাণাদি জমা দিতে হবে, সেগুলো হচ্ছে প্লটের বরাদ্দপত্রের ফটোকপি, দখল হস্তান্তরপত্রের ফটোকপি, মূল লিজের দলিল ও বায়না দলিলের ফটোকপি, ফ্ল্যাট ক্রয়ের রেজিস্ট্রি করা বায়নাচুক্তি, ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র এবং ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল (বন্ধক দেয়ার আগে)।
এ ছাড়াও উভয়ক্ষেত্রে ঋণ আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে নামজারি খতিয়ানের জাবেদা নকল, হাল সনের খাজনা রসিদ, জমির মালিক কর্তৃক ডেভেলপারের দেয়া রেজিস্ট্রি করা আমমোক্তারনামা দলিল, জমির মালিক এবং ডেভেলপারের সাথে রেজিস্ট্রি করা ফ্ল্যাট বণ্টনের চুক্তিপত্র, অনুমোদিত নকশার ফটোকপি, ফ্ল্যাটের মাটি পরীক্ষার রিপোর্টের ফটোকপি, সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত ছকে ইমারতের কাঠামো নকশার ফটোকপি ও ভারবহন সনদ, ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্ঘস্মারক, সঙ্ঘবিধি ও রিহ্যাবের নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, ডিজাইন মোতাবেক কাজ করার ব্যাপারে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের দেয়া আন্ডারটেকিং, অন্য কোনো ব্যাংক/ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ নাই মর্মে ডেভেলপারের দেয়া স্ট্যাম্প পেপারে ঘোষণাপত্র, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, বেতনের সনদপত্র, সত্যায়িত ছবি ও সই। ঋণ নেয়ার জন্য সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মনোনীত করার আগে অর্থ বিভাগের গৃহঋণ সেলের অনুমতি নিতে হবে।
কিন্তু যারা আবেদন করেছেন, তাদের অধিকাংশ এই নীতিমালা অনুযায়ী আবেদন করেননি। ফলে তাদের আবেদন ত্রুটিপূর্ণ বিবেচনা করে বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদককে বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন কাগজ দেয়ার কথা বলা থাকলেও অধিকাংশ আবেদনকারী তার পুরোটা জমা দেননি। কেউ আবার ৮০ ভাগ ঠিকঠাক কাগজ দিলেও বাকি ২০ ভাগ প্রদান করেননি। ফলে তাদের আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তাদের আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ১৫০ জনের আবেদন মঞ্জুর করে দিয়েছি। তারা ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনও করে নিয়েছেন। তবে যাদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যাই বেশি। কিছুসংখ্যক রয়েছে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। চাকরিজীবীরা সবচেয়ে ঋণ আবেদন করেছেন ৭৫ লাখ টাকার জন্য। বাকি করেছেন ৬৫ লাখ টাকা ঋণ চেয়ে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রণীত গৃহঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এর মধ্যে ৫ শতাংশ সুদ দেবে ঋণগ্রহীতা সরকারি চাকরিজীবী এবং বাকি ৫ শতাংশ সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। ইতোমধ্যে ১৫০ জন ঋণ গ্রহীতার ভর্তুকির অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে অর্থ বিভাগ থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ দিকে গৃহ ঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণ হচ্ছে ৭৫ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা। ঋণের বিপরীতে সুদের ওপর সুদ, অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ নেয়া হবে না। কোনো ‘প্রসেসিং ফি’ বা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো ‘অতিরিক্ত ফি’ দিতে হবে না। ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ২০ বছর। সরকারি তফসিলি ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
গৃহনির্মাণ কাজের ওপর ভিত্তি করে মঞ্জুরিকৃত ঋণ সর্বোচ্চ চারটি কিস্তিতে বিতরণ করা হবে। আর রেডি ফ্ল্যাট অথবা জমিসহ তৈরি বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সব ঋণ এক কিস্তিতে দেয়া যাবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। অনিবার্য কারণবশত মাসিক কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে ওই দেরির জন্য আরোপযোগ্য সুদ শেষ কিস্তিুর সাথে যুক্ত হবে। এ ছাড়া গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তিুর ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ এক বছর পর এবং ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ছয় মাস পর ঋণ গ্রহীতার মাসিক ঋণ পরিশোধের কিস্তি আরম্ভ হবে।
তবে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু এবং দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নীতিমালার আওতায় তিনি ঋণ গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কোনো কর্মচারীও এ নীতিমালার আওতায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।
নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো কর্মচারী ঋণ নেয়ার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে বা বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হলে আদেশ জারির তারিখ থেকে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। এ ক্ষেত্রে ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পেনশনসুবিধা বা আনুতোষিক সুবিধা থেকে আদায় করা হবে। ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে যতটুকু সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এরপরও ঋণ পাওনা থাকলে উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা