২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নিয়ন্ত্রণহীন তীর রক্ষা ব্যয়

-

দেশের নদীগুলোর মতো এগুলোর তীর সংরক্ষণ খরচেও নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না। সমীক্ষা ছাড়াই এই সব প্রকল্পে ব্যয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে। বছর ঘুরলেই এই তীর সংরক্ষণ খাতের ব্যয় বেড়েই চলছে। কোনো ধরনের লাগাম নেই এই উন্নয়ন খরচে। কাজের মেটেরিয়াল একই হওয়া সত্ত্বেও একই দেশে নদীর তীর সংরক্ষণ ও রক্ষা ব্যয়ে আকাশ-পাতাল তারতম্য। প্রতি কিলোমিটারে নদীর তীর রক্ষা বা সংরক্ষণ ব্যয়ের ব্যবধান ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা।

কোনো ধরনের সামঞ্জস্য নেই পানিসম্পদ খাতের নদীর তীর সংরক্ষণ ব্যয়ের মধ্যে। কোনোটাতে ব্যয় কিলোমিটারে ১২ কোটি টাকা আবার কোনোটার ব্যয় ৭১ কোটি টাকার বেশি। পরিকল্পনা কমিশন এসব ব্যয়ের ব্যাপারে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ আনতে পারছে না। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) থেকে দেয়া পরামর্শক ও সুপারিশ মন্ত্রণালয়গুলো আমলেই নিচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, প্রস্তাবিত প্রতিটি প্রকল্পের তীররক্ষা ব্যয়ের মধ্যে কোনো ধরনের মিল নেই। আবার একই নদীতে এই ব্যয়ের ভিন্নতাও দেখা গেছে। ৮৩২ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত বগুড়া জেলার যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে খরচ দেখানো হয়েছে ৭১ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এখানে ৪ দশমিক ১১৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করার কথা, যার জন্য মোট ব্যয় হবে ২৯৩ কোটি ৮১ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

যেখানে সিলেটের কালকিনি-কুশিয়ারা নদীর তীর সংরক্ষণ চলমান প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে তীর সংরক্ষণ খরচ হচ্ছে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা। একইভাবে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা বিদ্যুকেন্দ্রের জন্য কুশিয়ারা নদীর তীর সংরক্ষণে কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার টাকা। এখানে মোট ৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। নোয়াখালীর মুসাপুরে ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ শ’ কোটি ৮৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার পদ্মার শাখা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে নওয়াপাড়া এলাকা এবং পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙন থেকে চরআত্রা এলাকা রক্ষা করার জন্য ৫৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প হয়েছে। যেখানে নদীর ৮ দশমিক ৭০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪৬৮ কোটি ১৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ফলে এখানে প্রতি কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করতেই খরচ হবে ৫৩ কোটি ৮১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। একই মন্ত্রণালয়ের অপর প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। আর প্রকল্পটি হলো, কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলাধীন ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডানতীর সংরক্ষণ এবং ড্রেজিং।

এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬৯৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এই দুই প্রকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজের ব্যবধান ৩২ কোটি ৫৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চলমান অন্যান্য প্রকল্পের ব্যয়ের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, তীর সংরক্ষণ ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি নির্দেশনা না মেনেই প্রস্তাবনা তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণেই প্রকল্পের খরচে কোনো ধরনের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। পানিসম্পদ খাতে বিশেষ করে নদী ড্রেজিং, তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। বছর ব্যবধানে এসব কাজে কিলোমিটার প্রতি খরচ ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি হারে বাড়ছে।

পাউবি প্রকৌশলী বলছেন, অনুমোদিত নকশা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অনুমোদিত রেট শিডিউল অনুযায়ী নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীভাঙনের তীব্রতা ও স্থাপনার ওপর প্রধান প্রকৌশলীর মতামতসহ কারিগরি কমিটি কর্তৃক ভেটিং নিয়ে এই প্রাক্কলন প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সেচ উইংয়ের যুগ্ম-প্রধান বলেছেন, নদীর তীর সংরক্ষণের কাজে চেইনেজ, স্থাপন, নকশা ও এ কাজে ব্যবহৃত মালামালের বিস্তারিত বিবরণ প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয় না। এসব খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা উচিত। প্রতিটি নদীর তীর সংরক্ষণে বেশির ভাগই একই ধরনের মালামাল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ব্যয়ের ব্যবধান মাত্রাতিরিক্ত। সমজাতীয় প্রকল্পের তুলনায় প্রতি কিলোমিটারে বা মিটারে এই ব্যয় অত্যধিক। চলমান প্রকল্পে এই ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে ৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং সমাপ্ত প্রকল্পে ৪১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement