২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ডিজির পদত্যাগ দাবিতে ইফায় অচলাবস্থা

ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল - ছবি : সংগৃহীত

মাহপরিচালকের (ডিজি) পদত্যাগের দাবিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। গতকাল সংস্থাটির আগারগাঁওস্থ প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের পদত্যাগের দাবিতে সারাদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এই পরিস্থিতিতে ডিজি তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেয়ার কথা জানিয়ে ইফা সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সোমবার কিছু সময়ের জন্য নিজ কার্যালয়ে গেলেও গতকাল তিনি কার্যালয়মুখী হননি।

এদিকে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অচলাবস্থা কাটাতে সংস্থাটির মহাপরিচালক নিজেই পদত্যাগ করবেন বলে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, শুভবুদ্ধির উদয় হলে তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন। অন্য দিকে ইফার ২০ জন পরিচালক (প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা) গত দুই দিনে আলাদাভাবে সভা করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ডিজিকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেয়ার আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করলেও তিনি তাদের সাক্ষাতের অনুমতি দেননি। পরিচালকরা বোর্ড অব গর্ভনরসের সভা ডেকেও এ ব্যাপাারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বোর্ডের চেয়ারম্যান ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য গতকাল চিঠি পাঠিয়েছে। 

এসব বিষয়ে ডিজির অবস্থান জানার জন্য এই রিপোর্ট লেখার সময় ডিজির মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল থেকেই আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের নীচে জড়ো হয়ে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ডিজির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মধ্যে ইফার পরিচালকেরা দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠকে বসেন বৈঠক থেকেই ডিজিকে ফোন করে তার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চান। কিন্তু ডিজি সাক্ষাতের অনুমতি না দিয়ে তাদের বলেন, কেউ যেন আমার বাসায় না আসে। আমি তিন দিনের ছুটিতে আছি। 

এর আগে রোববার বিকেলে ইফার ২০ জন পরিচালক বৈঠক করে ডিজিকে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সবাই তাতে স্বাক্ষর করেন। ওই বৈঠকে ইফার বোর্ড অব গভর্নরসের বৈঠক ডাকার জন্য বোর্ডের চেয়ারম্যান ধর্মপ্রতিমন্ত্রীকেও অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়ে সাক্ষাতের অনুমতি চাওয়া হয়। এতে স্বাক্ষর করে জ্যেষ্ঠ পরিচালক মাহবুবুল আলম (জাকাত বোর্ড)। ইফা ডিজির সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাক্ষাতের যে অনুমতি দেননি সেই বিষয়ও উল্লেখ করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাজে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে জানিয়ে তা নিরসনের বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রতিমন্ত্রীর সাথে পরিচালকেরা সাক্ষাৎ করতে চান বলে জানান। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক গত রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, ধর্মপ্রতিমন্ত্রীও সাক্ষাতের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় দেননি। গত রাতে পরিচালকরা বোর্ড অব গভর্নরসের অন্যতম সদস্য মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর সাথে তার বাসায় সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। এর আগে মিছবাহুর রহমান চৌধুরীই শনিবার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছিলেন ইফা ডিজি গত রোববার তার পদত্যাগের বিষয়টি জানান। অবশ্য পরে ডিজি তার মনোভাব পরিবর্তন করেন। তবে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মিছবাহুর রহমানকে এ বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছতে ডিজির সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। 

ক্ষমতার অপব্যবহার অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে গত ১০ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয় ইফা জিজিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পরই ডিজির পদত্যাগের বিষয়টি সামনে আসে। শনিবার ছুটির দিনে ডিজি সংস্থার সচিব কাজী নুরুল ইসলামকে ডেকে নিজের পদত্যাগের কথা জানালেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। ডিজি ওই দিন ইফার ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় নেয়ার জন্য গাড়িতে ওঠালে সেগুলো সচিব ফেরত নিয়ে নিজের হেফাজতে রাখার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান।

তবে ডিজি গত রোববার পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত জানাননি এবং কার্যালয়েও যাননি। এ ব্যাপারে তার মোবাইল ফোনে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেছিলেন, তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তার পদত্যাগের কিছু নেই। সরকার চাইলে তার চুক্তি বাতিল করে অন্য কাউকে নিয়োগ দিতে পারে। এরই মধ্যে ডিজি সংস্থার বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের সাথে একটি সমঝোতার চেষ্টা করেন বলেও জানা যায়। গত সোমবার সকালে তিনি নিজ কার্যালয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার চলে যান।

গতকাল সারা দিনই তার পদত্যাগ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকালই তিনি ইফা সচিবকে নিজে ১৮ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেয়ার কথা উল্লেখ করে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্ব পালন করার জন্য একটি চিঠি পাঠান। সচিব সেটি রিসিভ করেন। 

গতকাল সচিবালয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অচলাবস্থা কাটাতে সংস্থাটির মহাপরিচালক নিজেই পদত্যাগ করবেন বলে আশা প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডিজিকে পদত্যাগ করতে বলা হবে না। শুভবুদ্ধির উদয় হলে তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন। তবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জানতে পেরেছি তিনি শনিবার (১৫ জুন) অফিসে এসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিবকে জানিয়েছেন তিনি পদত্যাগ করবেন। আমাকেও সেটি জানিয়েছিলেন। পরে শুনি তিনি ৫০টি ফাইল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি ফাইগুলো কেন নিতে চেয়েছিলেন সেটা বোধগম্য নয়। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। অব্যাহতি দেয়ার অনুরোধ জনিয়েছেন।

তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ভালো মানুষ, তিনি আমাদের লোক। ১০ বছর তিনি এখানে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বড় রোগে ভুগছেন। তার শারীরিক অবস্থাও ভালো না। কিছু দিন আগে তার ছেলে আত্মহত্যা করে মারা গেছেন। সেটা নিয়েও তিনি মানসিকভাবে ভালো নেই।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব কিছু মিলে তিনি বলেছেন শনিববার তিনি পদত্যাগ করে চলে যাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করেননি। কেন করেননি তা জানি না। আশা করি, তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ক্ষতি করবেন না। সংস্থাটির মঙ্গল কামনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে যা চলছে সেটি অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত। সবার প্রতি আহ্বান জানাব যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। এটা ডাইভার্ট হয়ে অন্য দিকে চলে না যায়। সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি জানান, পরিচালকরা সোমবার (১৭ জুন) মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি একজন অক্ষম-অসুস্থ মানুষ। তাকে এখন নিজে থেকে অব্যাহতি নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সব পরিচালক এ বিষয়ে একমত হয়েছেন সে বিষয়ে তাকে অবহিত করা হবে। এ সময় ইফার অচলাবস্থা মোটেও কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সংস্থাটিতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা হলে তা তদন্ত করবে মন্ত্রণালয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে পলিটিক্যাল মোটিভেশনের চেয়ে রিলিজিয়াস মোটিভেশনটা কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে শেখ মো: আবদুল্লাহ বলেন, ‘রিলিজিয়াস মোটিভেশনটা কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মূল ও প্রধান কাজ। জঙ্গি, মাদকাসক্তি নিরসনে তৎপরতা, সন্ত্রাসবাদ এগুলো সম্পর্কে কুরআন-হাদিসে এত সুন্দর সুন্দর ব্যাখ্যা এবং এত নির্দেশনা আছে সেগুলো যদি একজন মুসলমান গ্রহণ করে তাহলে কোনো দেশে কিন্তু সন্ত্রাসবাদ হতে পারে না।


আরো সংবাদ



premium cement