আলোচিত ২০১৯উড়োজাহাজ ছিনতাই ও ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযান
- মনির হোসেন
- ০১ জানুয়ারি ২০২০, ০৭:০০
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-১৪৭) উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টার ঘটনাটি ছিল ২০১৯ সালের আলোচিত ঘটনার অন্যতম একটি। ঘটনার সময় পাইলট জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করানোর পর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কমান্ডো অভিযানে ছিনতাই চেষ্টাকারী নিহত হন।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি আকাশে উড়ার কিছুক্ষণ পরই ভেতরে বোমা ও অস্ত্রসদৃশ বস্তু নিয়ে ককপিটের সামনে অবস্থান নিয়ে যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের ভয় দেখাতে থাকেন ছিনতাইকারি। ওই ব্যক্তিটি দাবি-দাওয়া নিয়ে একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চান। যাত্রীরা ওই ব্যক্তির এমন কা- দেখে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান। এ সময় যুবকটি ককপিটের দরজা খোলার জন্যও বারবার লাথি মারতে থাকেন। পাইলট তাতে সাড়া না দিয়ে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক অবতরণ করান। এ সময় আতঙ্কিত যাত্রীরা যে যেভাবে পারেন এয়ারক্রাফট থেকে দ্রুত নেমে যান। তখনো সাগর নামের এক কেবিন ক্রুকে আটকে রাখেন ছিনতাইকারী। একপর্যায়ে সাগরও নেমে পড়েন। এরই মধ্যে বিমানবন্দর রানওয়েতে অবস্থান করা উড়োজাহাজটি চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেন পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যরা। এরপরই শুরু হয় কমান্ডো অভিযান। এতে ছিনতাইকারী প্রথমে আহত হন। এরপর মারা যান।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টাকারীর ‘কথিত নায়ক’ এর আসল নাম পলাশ আহমেদ। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা এলাকায়। তার পিতার নাম পিআর জাহান সরদার। তিনি চিত্রনায়িকা সিমলার সাবেক স্বামী।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় বিমান ছিনতাই চেষ্টা : মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মশিউর রহমান উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস ওই সময় শেয়ার করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেন, লিলি ও আমি দুবাইগামী বিমানের ওই ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিলাম। বিমানটি ঢাকা ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ ইকোনমি ক্লাস থেকে একজন তরুণ উঠে এসে বিজনেস ক্লাসে প্রবেশ করলেন। তিনি আমার সামনের ফাঁকা আসনে বসে গেলেন। তিনি তার ব্যাকপ্যাক খুলে ভেতর হাত দিয়ে বের করলেন একটি অস্ত্র, একটি লাইটার ও বিস্ফোরকের মতো দেখতে একটি ডিভাইস। একপর্যায়ে তিনি বন্ধ ককপিটের খুব কাছে সামনে গিয়ে ইংরেজিতে বললেন, ‘এই বিমানটি ছিনতাই করা হয়েছে! অবিলম্বে ককপিটের দরজা খুলুন। যদি বিমানটি অবতরণ করে তাহলে আমি এটা উড়িয়ে দেবো।’ এরপর চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আমি একজন স্কটিশ নাগরিক। আমার মাত্র একটিই দাবি। তা হলো, আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পেতে চাই। সে একজন সেলিব্রেটি...।’
আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এই ফ্লাইটে তার স্ত্রী আছেন কি না। জবাবে তিনি বললেন, ‘না। তিনি এই বিমানে নেই।’ এক পর্যায়ে ওই যুবক উত্তেজিত হয়ে ককপিটের দরজায় লাথি মারতে শুরু করলেন। এ সময় একজন ক্রু তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। পেছনের দিকের যাত্রীরা যখন পরিস্থিতি পুরোপুরি বুঝতে পারলেন তখন শুরু হলো চিৎকার, চেঁচামেচি। এমন পরিস্থিতিতে বিমানের কেবিন ক্রুদের সাথে ওই তরুণের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ততক্ষণে একটি ইমার্জেন্সি এক্সিট (জরুরিভাবে বের হওয়ার দরজা) খোলা হয়েছে। আমি দরজাটি খুলেছি এবং বিমানের পাখার ওপর দিয়ে বের হয়ে এসে টারমাকে লাফিয়ে পড়ি।
পিস্তল নিয়ে রহস্য : বিমানের উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খি ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় ছিনতাইকারীর হাতে সত্যিকারের পিস্তল না খেলনা পিস্তল ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। ওই ফ্লাইটের যাত্রীরা দাবি করেছিলেন, উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী যুবক শৌচাগারের দরজায় হ্যান্ডগান থেকে গুলি করেছিল। দ্বিতীয়বার যুবকটি ফাঁকা গুলি করে। পরবর্তী সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছিনতাইকারীর কাছে যে পিস্তলটি পাওয়া গেছে তা খেলনা পিস্তল। ঘটনার পর পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়–য়া আলামত হিসেবে ওই খেলনা পিস্তল জব্দ করেন।
পলাশের হাতে খেলনা পিস্তল ছিল : সিআইডি
দুবাইগামী বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশ আহমেদের কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তলটি প্লাস্টিকের তৈরি ছিল। এটি বাংলাদেশে তৈরি খেলনা পিস্তল বলে প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিটের হাতে এই তদন্ত প্রতিবেদন তুলে দেয়ার পর সিটির তদন্ত কর্মকর্তা রাজেশ বরুয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। সেখানে বলা হয়েছে, পিস্তলটি একটি খেলনা পিস্তল। এরপর এটি তদন্তের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়। এ দিকে তদন্তকারী সংস্থা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপির) কাউন্টার টেরোরিজমের একটি দল পলাশের বাবা-মা আত্মীয়স্বজনসহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পলাশের সাবেক স্ত্রী চিত্রনায়িকা শিমলাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তবে ঘটনার আগে থেকেই শুটিংয়ের কাজে ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থান করছিলেন সিমলা। চিত্রনায়িকা সিমলা পলাশের স্ত্রী ছিলেন। পরে তাদের বিচ্ছেদও হয়েছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা